ঘর বন্দি থাকুন করোনা কমে আসবে
ডাঃ মোস্তফা কামাল
আইসিইউ ইনচার্জ (রামেক) হাসপাতাল
প্রতিদিন এতো মৃত্যু। অামরা যারা এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী সবার কাছে খুব কষ্টকর সংবাদ এটা। অামাদের ভালো লাগছে না। দয়া করে অাপনারা করোনা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন, তাহলেই মৃত্যু সংখ্যা কমে অাসবে, ইনশাআল্লাহ।
সকল প্রচেষ্টা সত্বেও অামরা মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে পারছি না। কার্যকর ঘরবন্দী থাকুন। তাহলেই সম্ভব হবে।
করোনার কারনে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা সারাবিশ্বে রোগীর পরিমাণের উপর নির্ভরশীল। রোগীর সংখ্যা যত বেশি, মৃত্যু ও ততই বেশী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অাজ সাড়ে তিনশো এর উপর রোগী ভর্তি অাছে, এবং সবার অক্সিজেনের মাত্রা ৯০% এর নীচে। সবার নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
বেশ কয়েকজন রোগীদের সাথে কথা বলে দেখেছি, উনাদের জ্বর, কাশি শুরু হয়েছিল ৭/৮ দিন আগে, ভেবেছিলেন, বৃষ্টিতে ভেজার জন্য হয়েছে, তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু না হলে উনারা হাসপাতালে ভর্তির জন্য অাসেননি। ভর্তির সময় তাদের অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৬০%-৭০%.
এতদিনে উনাদের ফুসফুস বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারেনি বলে Heart, Brain, kidney দুর্বল হয়ে গেছে। ফুসফুসও অর্ধেকেরও বেশি অকার্যকর হয়ে গেছে।
জুন মাসের শুরু থেকে অামরা ৩০%-৪০% গ্রামের সাধারন রোগী অাইসিইউ তে পাচ্ছি, যারা করোনা অাক্রান্ত হবেন, এমনটা ভাবতেও পারেননি। সিরিয়ালের কারণেই উনারা অাইসিইউতে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারনে শরীর প্রচন্ড দুর্বল করে দেয়, সে সময় অতিরিক্ত পুষ্টির দরকার, অথচ, ঔষধ, পরীক্ষা নীরিক্ষার খরচের টাকা যোগান দিতেই হিমশিম খাচ্ছে সেখানে, ভালো পুষ্টিকর খাবার কিভাবে পাবেন?
সরকারিভাবে অামাদের হাসপাতালের কোভিড রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, নানান কারনে সেটা পর্যাপ্ত হয় না ব’লে মনে হয়, রোগীর লোকজন সেটা ভাগাভাগি করে খেতে বাধ্য হয়, দারিদ্র্যতার কারনে।
এবারের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর কারণে যাদের অাইসিইউ লাগছে, তাদের অারও ৩/৪ সপ্তাহ পোস্ট কোভিড চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন, পর্যাপ্ত পুষ্টি ও সম্পুর্ন বিশ্রামের ব্যাপারে শৈথিল্য, মৃত্যুর কারন হয়ে দাড়াচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ও নন কোভিড অাইসিইউতে সত্যিকার দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় বিগত ১০ বছর যাবৎ সব রকম সহযোগিতা করা হয়ে থাকে, মহান রাব্বুল আলামীনের কৃপায় ভবিষ্যতেও সেটা অব্যহত থাকবে, সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।
অাপনার অাশেপাশের করোনা অাক্রান্ত রোগীর জন্য একটু খবর নিন, পারলে একটু পুষ্টিকর খাবার এর ব্যবস্থা করে দিন।
নিজে মাস্ক পরুন, অন্যকে পরতে বলুন।
নিজে ঘরবন্দী থাকুন, অন্যদেরও থাকতে বলুন।
–