1. admin@birbangla24.com : birbangla24.com :
  2. tipuisd@gmail.com : বীর বাংলা ডেক্সঃ : বীর বাংলা ডেক্সঃ
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন

১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের এইদিনে

বীর বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১২৬ বার পড়া হয়েছে

১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ । আজকের দিনে চারদিকে বাঙালির বিজয় নিশান উড়ছে। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তখন পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। ঢাকাকে চার দিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে মিত্রবাহিনী। একমাত্র ঢাকা ছাড়া গোটা দেশ মূলত মুক্ত হয়ে গেছে। এদিন পাকিস্তানকে রক্ষায় মরিয়া মার্কিন-চীনের কূটনৈতিক চেষ্টাও ব্যর্থ করে দিয়েছে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন। একাত্তরের রক্তঝরা এ দিনে পাকিস্তানের চলমান যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রাশিয়া তৃতীয়বারের মতো ভেটো দেয়। রাশিয়ার ভেটোতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ হয়ে না গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন আরো দেরি হতো। ১৯৭১ সালের এই দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শিগগিরই যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। তিনি ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ চায় না, তবে যুদ্ধ বাধলে সে তাতে জড়িয়ে পড়বে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বললেও এই দিনই ২৪ ঘণ্টা থেমে থাকার পর বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর। অন্যদিকে বাংলাদেশ নামক দেশের অভ্যুত্থান ঠেকাতে না পেরে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব ও মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আল বদরদের নিয়ে ঘৃণ্য ও বর্বর ষড়যন্ত্র চালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে থাকে। চালাতে থেকে শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে নিষ্ঠুর ও নির্মম কায়দায় হত্যাযজ্ঞ। যুদ্ধ জয়ের নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখে মিত্রবাহিনী যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে। কারণ তারা জানমালের ক্ষতি কম করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের দিকে নিয়ে যায়। ঢাকা দখল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এই দিনে পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। ৫৭ নম্বর ডিভিশনের দুটো ব্রিগেড এগিয়ে আসে পূর্বদিক থেকে। উত্তরদিক থেকে আসে জেনারেল গন্ধর্ব নাগরার ব্রিগেড এবং টাঙ্গাইলে নামা ছত্রীসেনারা। পশ্চিমে ৪ নম্বর ডিভিশনও মধুমতি পার হয়ে পৌঁছে যায় পদ্মার তীরে। রাত নয়টায় মেজর জেনারেল নাগরা টাঙ্গাইল আসেন। ব্রিগেডিয়ার ক্লের ও ব্রিগেডিয়ার সান সিং সন্ধ্যা থেকে টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে নয়টায় টাঙ্গাইল ওয়াপদা রেস্ট হাউসে তারা পরবর্তী যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসেন। আলোচনার শুরুতে মেজর জেনারেল নাগরা মুক্তিবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যদি আমাদের বিনাবাধায় এতোটা পথ পাড়ি দিতে সাহায্য না করতেন, তাহলে আমাদের বাহিনী দীর্ঘ রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তো। রাস্তাতেই আমাদের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যেতো। এদিন মিত্রবাহিনীর সাতান্ন নম্বর ডিভিশনের দুটি ব্রিগেড এগিয়ে আসে পূর্বদিক থেকে এবং উত্তরদিক থেকে জেনারেল নাগরার বাহিনী ও কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হালকা প্রতিরোধ ব্যর্থ করে কালিয়াকৈর পর্যন্ত এসে পৌঁছান। অন্যদিকে লে. কর্নেল শফিউল্লাহর ‘এস’ ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠে ডেমরা পৌঁছায়। সমুদ্রপথে শত্রুদের পালানোর সুযোগ কমে যাওয়ায় ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ঢাকা চূড়ান্ত লড়াইয়ের স্থল হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকায় সম্ভাব্য পরিণতির আশঙ্কাও দ্রুত বাড়তে থাকে। সৈয়দপুরে এ দিনে আত্মসমর্পণ করে আটচল্লিশ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্ট চট্টগ্রামের দিকে এগোনোর পথে নাজিরহাটে হানাদাররা বাধা দেয়। এখানে চব্বিশতম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স তাদের তিন কোম্পানি এবং বেশকিছু ইপিসিএএফসহ অবস্থান নিয়েছিল। এখানে ব্যাপক যুদ্ধের পর পালিয়ে যায় হানাদাররা। এ দিকে বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সর্বপ্রথম ইউনিট হিসেবে বিশ ইবি ঢাকার শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে মুরাপাড়ায় পৌঁছায়। অন্যদিকে খুলনা, বগুড়া ও চট্টগ্রামে পাকিস্তানি অধিনায়কেরা শেষ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে দলে দলে পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ শুরু করে দেয়। একাত্তরের আজকের দিনে কুমিল্লার ময়নামতিতেই এক হাজার ১১৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। বিভিন্ন এলাকা পাকিস্তানি দখলমুক্ত হওয়ায় রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন অবরুদ্ধ জনতা। যারা বাড়িঘর ছেড়ে দূরদূরান্তে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেন। ভারতীয় বিমানবাহিনী দুই দিন বিরতি দিয়ে আজ আবার ঢাকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে। কুর্মিটোলা বিমানবন্দর ও বঙ্গভবন (তৎকালীন গর্ভনর হাউজ) মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবিরাম বোমাবর্ষণে গর্ভনর ডা: এ এম মালিক কর্মকর্তাদের নিয়ে মাটির নিচে বাংকারে আশ্রয় নেন। এদিন ঢাকায় আটকে পড়া পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। আজকের এই দিনে আত্মসমর্পণের বিষয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি তার সহকর্মীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান রক্ষা করবে বলে যে আশা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের ছিল তা সুদূরপরাহত হয়েই থাকল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত